২৭ বছর আগে আসা রোহিঙ্গারাও ফিরেনি

মাহাবুবুর রহমান :

করিম উল্লাহ। তার পিতার নাম মোহাম্মদ কাসিম। ১৯৯২ সালে তার বয়স যখন ৫/৬ বছর ছিল তখনি পার্শ্ববর্তি মায়ানমার থেকে টেকনাফের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশে। মায়ানমারে তার বাড়ি ছিল রাসিধং থানার শিলখালী গ্রামে। বর্তমানে তার বয়স ৩৪ বছর। এর মধ্যে তার নিজের পরিবারেই আছে ৬ সদস্য। ২৭ বছর ধরে থাকেন কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং এফ ব্লকের রেজিষ্ট্রার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এর মধ্যে করিম উল্লাহ পটিয়ার জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা থেকে লেখাপড়াও করেছেন। অনেক জায়গায় কাজ করার পরে বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই একটি মসজিদে ইমামতি করেন।

আলী আহাম্মদ (৪৪)। পিতা শামসুল ইসলাম। তিনি থাকেন কুতুপালং রেজিষ্ট্রার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। তিনিও ১৯৯১ সালে মায়ানমারের মংডু এলাকার ফকিরা গ্রাম থেকে এসেছেন। আসার সময় তার তেমন কেউ ছিল না। কিন্তু বর্তমানে তার পরিবারের সদস্য সংখ্যাই একাধিক। রোহিঙ্গা হলেও এর মধ্যে আলী আহামদ উখিয়ার ডিগলিয়া পালং মাদ্রাসা, পরে রামু চাকমারকুল মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছেন। বর্তমানেও ভাল বেতনে চাকরী করছেন। সে হিসাবে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন ২৭ বছর।

শামসুল আলম বয়স ৬৯। তার পিতার নাম আবুল হোসেন। তিনি যখন ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে আসেন তখন পুরু যৌবন। এখন বয়সে বার্ধক্য আসলেও তিনি যেতে চান না বাংলাদেশ থেকে। তিনি এসেছিলেন একা কিন্তু এখন তারই পরিবারে আছে ৬  সদস্য। বিয়ে দিয়েছে ২ মেয়ে এছাড়া সেখানে নাতী নাতনী মিলিয়ে ২০ জনের মত সদস্য। বর্তমানে ভাল বেতনের চাকরীও করছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।
এ সময় কথা হয় আবু ছালেক (৪১)। তিনিও থাকেন রেজিষ্ট্রাট ক্যাম্প জি ব্লকে। রোহিঙ্গা হলেও লেখাপড়া করেছেন কক্সবাজার শহরের রহমানিয়া মাদ্রাসা আর টেকনাফের মাদ্রাসায়। এরা সবাই রোহিঙ্গা, ২৭ বছর আগে বাংলাদেশে এসেছেন এখনো ফিরে যান নি তারা। বরং বাংলাদেশকেই বানিয়ে নিয়েছেন স্থানীয় নিবাস।

তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চান কিনা জবাবে তারা বলেন,২৭ বছর আগে আমরা এসেছিলাম এখন আমাদের বাকি আত্বীয় স্বজন ও বাংলাদেশে চলে এসেছে। আর সেখানে বর্মি বাহিনি আমাদের অনেক আত্বীয় স্বজনকে হত্যা করেছে আমাদের বাড়ি ঘর কেড়ে নিয়েছে। সে সব কিছুর বিচার হলে তবেই আমরা ফিরবো না হলে বার্মায় ফিরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারা করবে এই হত্যার বিচার এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় করবে। সে হিসাবে কোন ভাবেই মায়ানমার ফিরতে রাজি নয় তারা। আর যেহেতু ২৭ বছরেও ফিরেনি আর কখন ফিরবে। একই সাথে নতুন ভাবে আসাদের ব্যাপারে তাদের অভিমত তারা ঠিকমত ন্যায় বিচার পেলে যাবে না হলে কেন যাবে।

গতকাল কক্সবাজারের একটি তারকা হোটেলে কর্মশালায় আসা এসব রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলার সময় অনেক স্থানীয় মানুষ বলছে আগের আসা রোহিঙ্গারা ২৭ বছরেও ফেরত যায় নি। কিন্তু তারা সংখ্যায় কম ছিল বলে সমস্যা হয় নি এখন কক্সবাজার জেলার স্থানীয় জনগোষ্টি ২৫ লাখ সেখানে রোহিঙ্গা আছে ১২ লাখ যে হারে তাদের সন্তান হচ্ছে এছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে আসছে সে হিসাবে স্থানীয় জনগোষ্টির সমান জনসংখ্যা হতে বেশি সময় লাগবে না। তাই দ্রুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন জরুরী।